নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন ও নিমপাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা
সূচিপত্র: নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন ও নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- এলার্জিতে নিমপাতার উপকারিতা
- খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
- চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
- চুলের জন্য নিমপাতার উপকারিতা
- নিমপাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা
- নিম পাতার ক্ষতিকর দিক কি কি
- ওজন কমাতে নিম পাতার ব্যবহার
- নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
- লেখকের শেষ মন্তব্য
এলার্জিতে নিমপাতার উপকারিতা
এলার্জিতে নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। নিমপাতা
ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ। এলার্জি ঔষধ ছাড়াও দূর করা সম্ভব। নিম পাতার সঠিক
ব্যবহার মাধ্যমে চিরতরের মতো এলার্জিকে দূর করা সম্ভব। আমরা আমাদের খাদ্য
তালিকায় বিভিন্ন সময় এলার্জি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। যেমন: গরুর মাংস, চিংড়ি
মাছ, বেগুন, হাঁসের মাংস ইত্যাদি। এই সমস্ত খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গা
চুলকাতে শুরু করে।
আরো পড়ুন:নিয়মিত কলা খাওয়ার ১০ টি কার্যকরী উপকারিতা
কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে নিমপাতা কে ব্যবহার করে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। এই জন্য দরকার নিম গাছ থেকে কয়েকটি পাতা
পেড়ে আনতে হবে। এই নিম পাতা কে ভালোভাবে ধুয়ে তারপর রোদে শুকাতে হবে। এরপর এই
নিম পাতা কে ভালোভাবে পিষে গুড়ো করে নিতে হবে। এরপর প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে
এক চা চামচ নিম পাতার গুঁড়ো এবং ১ চামচ ভুসি এক গ্লাস পানিতে ৩০ মিনিট
ভিজিয়ে রাখতে হবে। এভাবে তিন বেলা খাওয়ার এক মাসের মধ্যেই এলার্জি থেকে চিরতরে
মুক্তি পাওয়া যাবে।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। যাদের
অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস ঔষধেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের জন্য নিম পাতার রস
খুবই উপকারী। এজন্য সকাল বেলা খালি পেটে এক চামচ নিমপাতার রস দুই থেকে তিন মাস
সেবন করলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাছাড়া যাদের জন্ডিস রোগ রয়েছে
তাদের নিম পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে সকাল বেলা খালি পেটে সেবন করলে
এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকাল বেলা খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে রক্তের ক্ষতিকারক উপাদান
ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাসের সমস্যা। সমস্যার জন্য
ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। তাদের জন্য সকাল বেলা খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়া
প্রয়োজন। তাছাড়া এটি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিম পাতায়
উপস্থিত এন্টি মাইক্রোবিয়াল, এন্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। নিমপাতা
ব্যবহারের মাধ্যমে চুলকানি থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যাবে। নিম পাতা ওষুধে
গুণাগুণ সম্পন্ন। এর জন্য সঠিক নিয়মে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য দরকার
কয়েকটি নিমপাতা। নিমপাতা গুলোকে ধুয়ে তারপর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এরপর নিমপাতা গুলোকে পিষে গুঁড়ো করে নিতে হবে। নিম পাতার গুঁড়ো এর সঙ্গে সরিষার
তেল মিশিয়ে চুলকানিতে লাগাতে হবে।
নিম পাতার ফুল এবং পাতা পিষেয়ে চুলকানিতে লাগালে চুলকানি ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া
নিম পাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পিষে আক্রান্ত স্থানে লাগালে এক সপ্তাহের মধ্যে
খোশ পাঁচড়া পুরনো ক্ষতের উপশম ঘটে। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণ চোখ ব্যথা করে তাদের
জন্য কয়েকটি নিমপাতা সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ নিম পাতার পানি ঠান্ডা করে চোখের
উপর পানি ঝাপটা দিলে চোখের চুলকানি ভালো হয়ে যায়। গোসল করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ
করে সেই গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের ক্ষতিকারক জীবাণু দূর হয়ে যায় এবং চুলকানিও
ভালো হয়ে যায়।
চুলের জন্য নিমপাতার উপকারিতা
চুলের জন্য নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়া এবং মাথায় খুশকি রয়েছে। নিম পাতা সঠিক ব্যবহারে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এর জন্য এক লিটার পরিমাণ পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ৩০ থেকে ৪০ টির মত নিমপাতা সারারাত দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।তাছাড়া নিম পাতার গুঁড়ো করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট করে নিয়ে ৩০ মিনিট চুলে দিয়ে রাখুন।
অন্তত এক সপ্তা ব্যবহারের মাধ্যমে চুল পড়া এবং খুশকি দূর করতে পারবেন। নিমপাতার গুড়ো এবং নারকেল তেলের মাধ্যমে ওই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এর জন্য নারকেল তেল হালকা গরম করে নিতে হবে। ঘুমানো পূর্বে মাথাতে লাগিয়ে ভালোভাবে মাসাজ করে নিন এবং সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতা স্বাভাবিকভাবে খুশকি তাড়ানোর জন্য কার্যক্রম।
নিমপাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা
নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিম পাতা ঔষধি
গুনসম্পন্ন। নিম পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে চুলকানি
তাদের জন্য নিম পাতার পানিতে গোসল করা উচিত। এর জন্য ফোটানো গরম পানিতে নিমপাতা
দিয়ে গোসল করতে পারেন। নিমপাতা তে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরা যা
ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও চুলকানির সমস্যার সমাধান করে।
গরমের সময় নিমপাতার পানি দিয়ে গোসল করা উচিত। গরমের সময় শরীর ঘামা থাকে। এই
ঘাম থেকে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে। তাই গোসল করার সময় পানি গরম করে নিয়ে
সেখানে কয়েকটি নিমপাতা দিয়ে গোসল সেরে নিতে পারেন।
নিম পাতার ক্ষতিকর দিক কি কি
নিম পাতার ক্ষতিকর দিক কি কি এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না। নিম পাতা খাওয়ার যেমন উপকার রয়েছে তেমনি বেশিদিন ব্যবহার করা হলে ক্ষতি হতে পারে।একদিনে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনটি নিমপাতা খাওয়া যেতে পারে। খালি পেটে নিম পাতা বেশিদিন খেলে ক্ষতি হতে পারে। নিমপাতা দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং মাথা ব্যাথা মত সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের নিমপাতা খাওয়া উচিত না। তাছাড়া বিভিন্ন অপারেশন
করার অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের নিম পাতা না খাওয়াই ভালো। এছাড়া
যারা সন্তান নিতে চাচ্ছে তাদের নিম পাতা থেকে দূরে থাকতে হবে। নিমপাতা খাওয়ার
ফলে আপনার সন্তান বন্ধাত্ব হতে পারে।
ওজন কমাতে নিম পাতার ব্যবহার
ওজন কমাতে নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। যাদের অতিরিক্ত
ওজন এবং ওজন নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারছেন না। তাদের
জন্য নিমপাতা রস খুবই উপকারী। তাছাড়া পানি গরম করে নিয়ে তাতে কয়েকটি নিমপাতা
দিয়ে দিতে হবে। এরপর পানি ফুটতে শুরু করলে সেখানে আদা এবং গোলমরিচ দিতে
হবে। ফুটন্ত গরম পানি ছেকে নিতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে
সেবন করতে হবে।
তবে এটি অবশ্যই সকালবেলা খালি পেটে পান করতে হবে। এটি পান করার পর তিরিশ মিনিট
পর্যন্ত কিছু খাওয়া যাবে না। আর এটি কখনো আগে তৈরি করে রাখবেন না। সকালবেলা ঘুম
থেকে উঠেই তৈরি করবেন। এটি ১০ থেকে ১৫ দিন খাওয়ার পর ওজন কমতে শুরু করবে।
নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম
নিম পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। নিম গাছের ডাল পাতা
সবই আমাদের জন্য উপকারী। নিম গাছ একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ। এটির অনেক উপকারিতা
রয়েছে। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়াবেটিস। তাদের জন্য এক অথবা আধা চামচ নিম
পাতার গুঁড়া এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া
যায়।
ব্রণের সমস্যার সমাধানের নিম পাতার গুঁড়ো খুবই উপকারী। এর জন্য নিম পাতার গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। এতে ব্রণের সমস্যা ও সমাধান হবে এর সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও বৃদ্ধি পাবে। চুল পড়া বন্ধ করতে এবং খুশকি দূর করতে নিম পাতা গুড়া খুবই উপকারী। নিম পাতার গুড়া খাওয়ার ফলে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন ও নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি নিমপাতা পছন্দ করেন এবং খেতে পছন্দ করেন তাহলে
অবশ্যই এই বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে। বিস্তারিত জেনে তারপর খেতে হবে।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি যদি এই ধরনের আরও
আর্টিকেল করতে চান তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url